এম,এ রউফ সিলেট,
দেখা গেছে নগরীর কোর্ট পয়েন্টের ফুট ওভারব্রিজ অনেকটা অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে। এমনিতেই এটি খুব একটা লোকজন ব্যবহার করছেন না, তার উপর অল্প যে ক’জন ব্যবহার করেন তারাও পড়েন বিব্রতকর অবস্থায়। ময়লা আবর্জনা আর ব্যানার ফ্যাস্টুনে অনেকটা ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে এই ওভারব্রিজ।
ব্যানারে ব্রিজের রেলিং ঢেকে দেওয়ায় ভেতরে মাদকসেবীরা বা টোকাইরা আড্ডা দেয়, রাত বাড়লে আনাগোনা বাড়ে অবাঞ্চিদের।
সরকার বদলেছে, বদলায়নি বন্দরবাজার। এখনও সিলেট নগরের প্রাণকেন্দ্রে প্রয়োজন ছাড়াই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে ফুট ওভারব্রিজ। যেখানে আবাস গড়েছে টোকাই, মাদকাসক্ত আর অবাঞ্চিতরা।সুন্দরের নগর সিলেটে বর্তমানে এক অসুন্দরের নাম বন্দরবাজার ফুট ওভারব্রিজ। সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনে পড়ে থাকা এই ব্রিজে একদিকে যেমন অপচয় হয়েছে সরকারি অর্থ পাশাপাশি নষ্ট হয়েছে নগরের সৌন্দর্য্য। প্রধান সড়কে অনেকখানি জায়গা জুড়ে তৈরি এই ব্রিজে একদিকে যেমন রাস্তার অনেক জায়গা অপচয় হয়েছে তেমনি আশপাশের হাসান মার্কেট, মধবনসহ বেশ কয়েকটি মার্কেটর সামন ঢাকা পড়ে ভাটা পড়ে ব্যবসা বাণিজ্যেরও। এমতাবস্থায় বারবার দাবি ওঠে এই ব্রিজ ভেঙে ফেলার। তবে দাবি উঠলেও সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে এখনও কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
এছাড়া শাবিপ্রবি, টিলাগড় এমসি কলেজ ও দক্ষিণ সুরমায় থাকা ওভারব্রিজগুলোর অবস্থাও একই। কোনো ধরনের ব্যবহার ছাড়াই পড়ে ব্রিজগুলো। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পরিষ্কার হয়না নিয়মিত, সিঁড়িতে পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল আর কাগজের টুকরা জমে স্তুপ হয়ে আছে। ব্রিজের উপরে রাতে মাদকসেবীদের ফেলে যাওয়া গাঁজার পুটলির উচ্ছিষ্ট, ফেনসিডিলের বোতল আর ব্যানার ফ্যাস্টুনের টুকরো জমে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। পথচারীরা খুব একটা ব্যবহার না করলেও দিনের বেলা স্কুল কলেজের অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী মাঝে-মধ্যে ব্যবহার করেন এই ব্রিজ। আর রাতের বেলা অন্ধকার ও ময়লায় লোকজন ব্রিজে উঠতে ভয় পান। গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় পুরো ওভারব্রিজের এদিক সেদিক ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে। দু’জন স্কুল ছাত্র নাক চেপে এর মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে নামছেন। তারা বলেন, নিচে জ্যাম থাকায় আমরা ব্রিজ দিয়ে রাস্তার পার হই। কিন্তু ময়লা আবর্জনায় আমাদের চলতে কষ্ট হচ্ছে। এটি নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। কয়েকজন পথচারী বলেন এই ব্রিজটি রাস্তা পারাপারে খুব একটা কাজে লাগে না। তবে সিএনজি স্ট্যান্ড থাকায় সন্ধ্যার পর এই এলাকায় প্রচন্ড যানজট হয়। তখন আমরা এই ব্রিজ ব্যবহার করতে পারলে ভালো লাগতো, কিন্তু তখন ব্রিজে চলাচল নিরাপদ মনে হয় না।এরআগে যানজট মুক্ত নগরী গড়ে তোলার কথা বলে সিলেটে প্রথম কোনো ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়। ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় এই ‘বন্দর বাজার ফুটওভারব্রীজ’ উদ্বোধন করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। ‘ফুটওভারব্রিজ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হয় বাংলাদেশ ইস্পাত অ্যান্ড প্রকৌশল কর্পোরেশনের নিজস্ব কোম্পানি ‘চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেড’ এর মাধ্যমে। ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ পদচারী-সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৫ সালের ২১ মে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। চার মাসের মাথায় নির্মাণকাজ শেষে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।কিন্তু যে আশা নিয়ে এটি চালু হয়েছিল তার উল্টোটাই ঘটছে। একাধিকবার বিক্রির উদ্যোগ নিয়েও উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় সেতুটি এখন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের গলার কাঁটা হয়ে আছে। তবে আওয়ামী সরকারের পতনের পর নতুন করে দাবি ওঠেছে তাদের সময়ের তৈরি এই অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা সরিয়ে ফেলার।